Header Ads

কোষ বিভাজন কাকে বলে? কোষ বিভাজনের বিস্তারিত

যে প্রক্রিয়ায় মাতৃ কোষের নিউক্লিয়াস একবার মাত্র বিভাজিত হয়ে সমআকৃতি, সমগুন, সমসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ঠ দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাকে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে।
মাইটোসিস কোষ বিভাজনে মাতৃকোষ থেকে সৃষ্ট অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা ও সাইটোপ্লাজম এর পরিমান একই থাকে। তাই মাইটোসিস কে সম বিভাজন বা সদৃশ বিভাজন বলে।

কোষ বিভাজন এবং তার প্রকারভেদ (Cell Division and its Classifications)

প্রতিটি জীবদেহ কোষ দিয়ে তৈরি। একটিমাত্র কোষ দিয়ে প্রতিটি জীবের জীবন শুরু হয়। বিভাজনের মাধ্যমে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি জীবদেহের একটি স্বাভাবিক এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কোনাে কোনাে জীবের দেহ একটিমাত্র কোষ দিয়ে গঠিত, এদের বলা হয় এককোষী (unicellular) জীব, যেমন ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা, প্লাজমােডিয়াম ইত্যাদি। এককোষী জীব বিভাজনের মাধ্যমেই একটি থেকে অসংখ্য এককোষী জীব উৎপন্ন করে। আবার অনেক জীব একাধিক কোষ দিয়ে গঠিত। এদের বলা হয় বহুকোষী (multicellular) জীব। মানুষ, বট গাছ, তিমি মাছ ইত্যাদি জীব কোটি কোটি কোষ দিয়ে গঠিত। বিশালদেহী একটি বট গাছের সূচনাও ঘটে একটি মাত্র কোষ (জাইগােট বা নিষিক্ত ডিম্বাণু) থেকে। এককোষী নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একসময় কোটি কোটি কোষের একটি পরিণত মানুষের সৃষ্টি হয়। আবার কোষ বিভাজনের মাধ্যমেই পুং ও স্ত্রী গ্যামেট সৃষ্টি হয়ে নতুন প্রজন্মের জন্ম হয়। জীবের বৃদ্ধি ও প্রজননের উদ্দেশ্যে কোষ বিভাজনের (cell division) মাধ্যমে কোষের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে থাকে। জীবদেহের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া হচ্ছে, 

  • মাইটোসিস (Mitosis) 
  • মিয়ােসিস (Meiosis)

মাইটোসিস (Mitosis)

এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় প্রকৃত বা সুকেন্দ্রিক কোষ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয়। মাইটোসিসে নিউক্লিয়াস একবার বিভাজিত হয়, প্রায় সমানভাবে। নিউক্লিয়াসের প্রতিটি ক্রোমােজোমও একবার করে বিভাজিত হয়। সাইটোপ্লাজমও বিভাজিত হয় একবারই। তাই মাইটোসিস বিভাজনে কোষের মাতৃকোষ এবং অপত্য কোষে ক্রোমােজোম সংখ্যা, তথা DNA-এর পরিমাণ সমান থাকে। শুধু যে পরিমাণে একই থাকে তা নয়, মাতৃকোষের DNA-এর প্রায় হুবহু অনুলিপি অপত্য কোষে পাওয়া যায়। একে সমীকরণিক বিভাজনও বলে। এই বিভাজন প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত জীবের দেহকোষে (somatic cell) হয়ে থাকে এবং বিভাজনের ফলে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণী এবং উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে বৃদ্ধি পায়। প্রাণীর দেহকোষে এবং উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের ভাজক টিস্যু, যেমন: কাণ্ড, মূলের অগ্রভাগ, ভূণমুকুল এবং জ্বণমূল, বর্ধনশীল পাতা, মুকুল ইত্যাদিতে মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজন হয়। নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অযৌন জননের সময়ও এ ধরনের বিভাজন হয়।

মাইটোসিসের পর্যায়সমূহ

মাইটোসিস কোষ বিভাজন একটি অবিচ্ছিন্ন বা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই বিভাজনে প্রথমে ক্যারিওকাইনেসিস অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে এবং পরবর্তীকালে সাইটোকাইনেসিস অর্থাৎ সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ঘটে। বিভাজন শুরুর আগে কোষের নিউক্লিয়াসে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ হয়। এ অবস্থাকে ইন্টারফেজ পর্যায় বলে। বর্ণনার সুবিধার জন্য মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন প্রক্রিয়াকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়ে থাকে, পর্যায়গুলাে হচ্ছে: প্রােফেজ, প্রাে-মেটাফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলােফেজ।

প্রােফেজ (Prophase)

এটি মাইটোসিসের প্রথম পর্যায়। এ পর্যায়ে কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয় এবং ক্রোমােজোম থেকে পানি হ্রাস পেতে থাকে। এর ফলে ক্রোমােজোমগুলাে আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে মােটা এবং খাটো হতে শুরু করে। যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে তখন এদের দেখা সম্ভব হয়। এ পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমােজোম সেন্ট্রোমিয়ার ব্যতীত লম্বালম্বি দুভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড উৎপন্ন করে। ক্রোমােজোমগুলাে কুণ্ডলিত অবস্থায় থাকায় এদের সংখ্যা গণনা করা যায় না।

 

কোষ বিভাজন কাকে বলে? কোষ বিভাজনের বিস্তারিত

কোষ বিভাজন কাকে বলে? কোষ বিভাজনের বিস্তারিত

প্রাে-মেটাফেজ (Pro-metaphase)

এ পর্যায়ের একেবারে প্রথম দিকে উদ্ভিদকোষে কতকগুলাে তন্ময় প্রােটিনের সমন্বয়ে দুই মেরু বিশিষ্ট স্পিন্ডল যন্ত্রের (spindle apparatus) সৃষ্টি হয়। স্পিন্ডল যন্ত্রের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানকে ইকুয়েটর বা বিষুবীয় অঞ্চল বলা হয়। কোষ কংকালের মাইক্রোটিবিউল দিয়ে তৈরি স্পিন্ডলযন্ত্রের তন্তুগুলাে এক মেরু থেকে অপর মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত, এদেরকে স্পিন্ডল তন্তু (spindle fibre) বলা হয়। এ পর্যায়ে ক্রোমােজোমের সেন্ট্রোমিয়ার স্পিন্ডলযন্ত্রের কিছু নির্দিষ্ট তন্তুর সাথে সংযুক্ত হয়। এই তন্তুগুলােকে আকর্ষণ তন্তু (traction fibre) বলা হয়। ক্রোমােজোমের সাথে এই তন্তুগুলি সংযুক্ত বলে এদের ক্রোমােসােমাল তন্তুও বলা হয়। ক্রোমােজোমগুলাে এ সময়ে বিষুবীয় অঞ্চলে বিন্যস্ত হতে থাকে। কোষের নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ঘটতে থাকে। প্রাণিকোষে স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টি ছাড়াও পূর্বে বিভক্ত সেন্ট্রিওল দুটি দুই মেরুতে অবস্থান করে এবং সেন্ট্রিওল দুটির চারদিক থেকে রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়। একে অ্যাস্টার-রে বলে। 

মেটাফেজ (Metaphase) 

 

এ পর্যায়ের প্রথমেই সব ক্রোমােজোম স্পিন্ডল যন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে (দুই মেরুর মধ্যখানে) অবস্থান করে। প্রতিটি ক্রোমােজোমের সেন্ট্রোমিয়ার বিষুবীয় অঞ্চলে এবং বাহু দুটি মেরুমুখী হয়ে অবস্থান করে।
এ পর্যায়ে ক্রোমােজোমগুলাে সর্বাধিক মােটা এবং খাটো হয়। প্রতিটি ক্রোমােজোমের ক্রোমাটিড দুটির | আকর্ষণ কমে যায় এবং বিকর্ষণ শুরু হয়। এ পর্যায়ের শেষ দিকে সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজন শুরু হয়। | নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাসের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।

অ্যানাফেজ (Anaphase)

প্রতিটি ক্রোমােজোমের সেন্ট্রোমিয়ার দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, ফলে ক্রোমােটিড দুটি আলাদা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় প্রতিটি ক্রোমােটিডকে অপত্য ক্রোমােজোম বলে এবং এতে একটি করে সেন্ট্রোমিয়ার | থাকে। অপত্য ক্রোমােজোমগুলাে বিষুবীয় অঞ্চল থেকে পরস্পর বিপরীত মেরুর দিকে সরে যেতে থাকে। অর্থাৎ ক্রোমােজোমগুলাের অর্ধেক এক মেরুর দিকে এবং বাকি অর্ধেক অন্য মেরুর দিকে অগ্রসর 

হতে থাকে। অপত্য ক্রোমােজোমের মেরু অভিমুখী চলনে সেন্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী থাকে এবং বাহুদ্বয় অনুগামী হয়। সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমােজোমগুলাে V, L, J বা I-এর মতাে আকার ধারণ করে। এদেরকে যথাক্রমে মেটাসেন্ট্রিক, সাবমেটাসেন্ট্রিক, অ্যাক্রোসেন্ট্রিক বা টেলােসেন্ট্রিক বলে। অ্যানাফেজ পর্যায়ের শেষের দিকে অপত্য ক্রোমােজোমগুলাে স্পিন্ডলযন্ত্রের মেরুপ্রান্তে অবস্থান নেয় এবং ক্রোমােজোমের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।

টেলোফেজ (Telophase) 

এটি মাইটোসিসের শেষ পর্যায়। এখানে প্রােফেজের ঘটনাগুলাে পর্যায়ক্রমে বিপরীতভাবে ঘটে। ক্রোমােজোমগুলােতে পানি যােজন ঘটতে থাকে এবং সরু ও লম্বা আকার ধারণ করে। অবশেষে এরা জড়িয়ে গিয়ে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম গঠন করে। নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে। নিউক্লিয়ার রেটিকুলামকে ঘিরে পুনরায় নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের সৃষ্টি হয়, ফলে দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। স্পিন্ডল্যন্ত্রের কাঠামাে ভেঙে পড়ে এবং তন্তুগুলাে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়। টেলােফেজ পর্যায়ের শেষে বিষুবীয় তলে এন্ডােপ্লাজমিক জালিকার ক্ষুদ্র অংশগুলাে জমা হয় এবং পরে এরা মিলিত হয়ে কোষপ্লেট গঠন করে। সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণুসমূহের সমবণ্টন ঘটে। ফলে দুটি অপত্য কোষ (daughter cell) সৃষ্টি হয়। প্রাণীর ক্ষেত্রে স্পিন্ডলযন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চল বরাবর কোষঝিল্লিটি গর্তের মতাে ভিতরের দিকে ঢুকে যায় এবং এ গর্ত সবদিক থেকে ক্রমান্বয়ে গভীরতর হয়ে একত্রে মিলিত হয়, ফলে কোষটি দুভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। 
 

মাইটোসিসের গুরুত্ব

জীবদেহে মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজনের কারণে প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজমের মধ্যকার আয়তন ও পরিমাণগত ভারসাম্য রক্ষিত হয়। এর ফলে বহুকোষী জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। সব বহুকোষী জীবই জাইগােট নামক একটি কোষ থেকে জীবন শুরু করে। এই একটি কোষই বারবার মাইটোসিস বিভাজনের ফলে অসংখ্য কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্ণ জীবে পরিণত হয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি, চারটি থেকে আটটি, এভাবে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে একটি কোষ থেকে সম্পূর্ণ একটি জীব (যেমন: মানুষ, প্রায় 30 ট্রিলিওন কোষ) গঠিত হতে বুঝি অনেক লম্বা সময় প্রয়ােজন। কিন্তু সেটি সত্যি নয়। যদি বৃদ্ধির জন্য দরকারি পুষ্টির সরবরাহ অক্ষুন্ন থাকে, সবগুলাে কোষই বিভাজনক্ষম হয় এবং প্রতিবার বিভাজনে যদি একদিন করে সময় লাগে বলে ধরে নিই, তবু মাত্র 40-50 দিনের মাথায় মানবদেহের জন্য প্রয়ােজনীয় সংখ্যক কোষ তৈরি হয়ে যাবে। মাইটোসিসে তৈরি অপত্য কোষে ক্রোমােজোমের সংখ্যা ও গুণাগুণ একই রকম থাকায় জীবের দেহের বৃদ্ধি সুশৃঙ্খলভাবে হতে পারে। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে, মাইটোসিসের ফলে অঙ্গজ প্রজনন সাধিত হয় এবং জননকোষের সংখ্যাবৃদ্ধিতে মাইটোসিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্ষতস্থানে নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে জীবদেহের ক্ষতস্থান পূরণ করতে মাইটোসিস অপরিহার্য। কিছু কিছু জীবকোষ আছে যাদের আয়ুষ্কাল নির্দিষ্ট। এসব কোষ বিনষ্ট হলে মাইটোসিসের মাধ্যমে এদের পূরণ ঘটে। মাইটোসিসের ফলে একই ধরনের কোষের উৎপত্তি হওয়ায় জীবজগতের গুণগত বৈশিষ্ট্যের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস টিউমার এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হতে পারে। টিউমার, ক্যান্সার এ শব্দগুলাের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এগুলাে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফল। মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এভাবে কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত থাকে। কোনাে কারণে এই নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে গেলে অস্বাভাবিকভাবে কোষ বিভাজন চলতে থাকে। এর ফলে টিউমার সৃষ্টি হয় এবং প্রাণঘাতী | টিউমারকে ক্যান্সার বলে। ক্যান্সার কোষ এই নিয়ন্ত্রণহীন অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনেরই ফল। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের রােগজীবাণু, কেমিক্যাল কিংবা তেজস্ক্রিয়তা ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। সহস্রাধিক জিনকে ক্যান্সার কোষ তৈরিতে সহায়ক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। উদাহরণ দেওয়ার জন্যে বলা যায়, হিউম্যান প্যাপিলােমা ভাইরাসের E6 এবং E7 নামের দুটি জিন এমন কিছু প্রােটিন সৃষ্টি করে, যা কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রক প্রােটিন অণুসমূহকে স্থানচ্যুত করে। এর ফলে কোষ বিভাজনের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যায় এবং সৃষ্টি হয় জরায়ুমুখের টিউমার। অনেক সময় এ দুটি জিন পােষক কোষের জিনের সাথে একীভূত হয়ে যায় এবং কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী প্রােটিন অণুগুলাের কাজ বন্ধ করে দেয়। সৃষ্টি হয় ক্যান্সার কোষ, কিংবা ক্যান্সার। অনেক ধরনের ক্যান্সার রয়েছে এবং সেগুলাে সবই কমবেশি মারাত্মক রােগ। লিভার, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, স্তন, ত্বক, কোলন এবং জরায়ু, অর্থাৎ দেহের প্রায় সকল অঙ্গেই ক্যান্সার হতে পারে।

মিয়ােসিস (Meiosis)

মিয়ােসিস বিভাজনের এক চক্রে নিউক্লিয়াস দুইবার বিভাজিত হয়। প্রথমবারে নিউক্লিয়াসের ক্রোমােজোম পরিমাণে অর্ধেক হয়ে যায়। এই বিভাজনে মাতৃকোষের যে দুটি নিউক্লিয়াস পাওয়া যায়, দ্বিতীয়বারে তার প্রতিটিই আবার দুটি কোষে বিভাজিত হয়। এবার অবশ্য ক্রোমােজোমের সংখ্যা এবং পরিমাণ সমান থাকে। তাই সব মিলিয়ে চূড়ান্ত ফল হলাে, মিয়ােসিস বিভাজনে একটি মাতৃকোষ থেকে চারটি অপত্য কোষ পাওয়া যায়, যেগুলাের প্রতিটিই মাতৃকোষের অর্ধেকসংখ্যক ক্রোমােজোম ধারণ করে (কাজেই DNA-এর পরিমাণও হয় প্রায় অর্ধেক)। তাই মিয়ােসিসের আরেক নাম হ্রাসমূলক বিভাজন।

প্রশ্ন হচ্ছে মিয়ােসিস কেন হয়? মাইটোসিস কোষ বিভাজনে অপত্য কোষগুলাের ক্রোমােজোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান থাকে। বৃদ্ধি এবং অযৌন জননের জন্য মাইটোসিস কোষ বিভাজন অপরিহার্য। যৌন জননে পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলনের প্রয়ােজন হয়। যদি জনন কোষগুলাের ক্রোমােজোম সংখ্যা দেহকোষের সমান থেকে যায় তা হলে জাইগােট কোষে ক্রোমােজোম সংখ্যা জীবটির দেহকোষের দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মনে কর, একটা জীবের দেহকোষে এবং জনন কোষে ক্রোমােজোম সংখ্যা চার (d)। পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলনের ফলে সৃষ্ট জাইগােটে ক্রোমােজোম সংখ্যা দাঁড়াবে আট (৪) এবং নতুন জীবটির প্রতিটি কোষে ক্রোমােজোম সংখ্যা হবে আট, যা মাতৃজীবের কোষের ক্রোমােজোম সংখ্যার দ্বিগুণ। যদি প্রতিটি জীবের জীবনচক্র এভাবে চলতে থাকে তাহলে প্রতি চক্রে যৌন জননের ফলে ক্রোমােজোম সংখ্যা বারবার দ্বিগুণ হতে থাকবে। আমরা জানি, ক্রোমােজোম জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন বহন করে। কাজেই ক্রোমােজোম সংখ্যা দ্বিগুণ হতে থাকলে বংশধরদের মধ্যে আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে। যেহেতু পুং ও স্ত্রী জনন কোষে ক্রোমােজোমের সংখ্যা অর্ধেক, তাই জীবের যৌনজননে পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলন হয়ে জাইগােটে পূর্ণসংখ্যক ক্রোমােজোম পাওয়া যায়। এভাবে জীবের ক্রোমােজোম সংখ্যা বংশপরম্পরায় একই থাকে। জনন কোষ সৃষ্টির সময় এবং নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের জীবনচক্রের কোনাে এক সময় যখন এ রকম ঘটে, তখন কোষের অর্ধেক ক্রোমােজোম সংখ্যার সে অবস্থাকে হ্যাপ্লয়েড (n) বলে। যখন দুটি হ্যাপ্লয়েড কোষের মিলন ঘটে, তখন সে
অবস্থাকে ডিপ্লয়েড (2n) বলে। অর্থাৎ মিয়ােসিস কোষ বিভাজন হয় বলেই
প্রতিটি প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় টিকে থাকতে পারে। মিয়ােসিস প্রধানত জীবের জনন কোষ | বা গ্যামেট সৃষ্টির সময় জনন মাতৃকোষে ঘটে। সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগধানী এবং ডিম্বকের মধ্যে এবং উন্নত প্রাণিদেহের শুক্রাশয়ে এবং ডিম্বাশয়ের মধ্যে মিয়ােসিস ঘটে। মস ও ফানজাতীয় উদ্ভিদের ডিপ্লয়েড মাতৃকোষ থেকে যখন হ্যাপ্লয়েড রেণু উৎপন্ন হয়, তখন জাইগােটে এ ধরনের বিভাজন ঘটে। | মিয়ােসিস বিভাজনের সময় একটি কোষ পর পর দুবার বিভাজিত হয়। প্রথম বিভাজনকে প্রথম | মিয়ােটিক বিভাজন বা মিয়ােসিস-1 এবং দ্বিতীয় বিভাজনকে দ্বিতীয় মিয়ােটিক বিভাজন বা মিয়ােসিস-২ 
 

বলা হয়। প্রথম বিভাজনের সময় অপত্য কোষে ক্রোমােজোমের সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমােজোম সংখ্যার
অর্ধেকে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিভাজনটি মাইটোসিসের অনুরূপ, অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যার কোনাে পরিবর্তন হয় না।। বাস্তবে মাঝে মাঝে হঠাৎ করে ক্রোমােজোমের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটতে পারে। যেমন: ব্যাঙ্কের একটি প্রজাতি Xenopus tropicalis-এর সম্পূর্ণ ক্রোমােজোম সেট দ্বিগুণ হয়ে Xenopus laeris প্রজাতির উৎপত্তি ঘটেছে। প্ল্যান্টি রাজ্যের বিভিন্ন সদস্যের (যেমন: আলু প্রভৃতি সবজি) দেহকোষে (জননকোষে নয়) এই প্রক্রিয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অনেক সময় অমিরা ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করার জন্য উদ্ভিদের এই জাত বেছে নিই, এমনকি সেরকম জাত পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করি, কারণ তা আকারে তুলনামূলকভাবে বড় হয়। এসব জাত খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে অধিকতর সহায়ক।
ক্রোমােজোম বা জেনেটিক বস্তুর সমতা রক্ষা করা ছাড়াও জীনগত বৈচিত্র্য বজায় রাখা মিয়ােসিসের একইরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি অবদান। যৌন জনন করে এমন সকল জীবে মিয়ােসিসের মাধ্যমে একইভাবে জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়ে থাকে। কোনাে প্রজাতির টিকে থাকা বা না থাকা মূলত নির্ভর করে তার সদস্য জীবদের মধ্যে কতটা বৈচিত্র্য আছে, তার উপর। পরিবেশ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। সেইসব প্রজাতি টিকে থাকে, যাদের অন্তত কিছু সদস্যের মধ্যে সেই পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যদি কোনাে প্রজাতির জীবদের মধ্যে বৈচিত্র্য কম থাকে তাহলে নতুন কোনাে পরিবেশে খাপ খাওয়ানাের মত বৈশিষ্ট্য কারাের মধ্যে থাকার সম্ভাবনাও হবে কম। ফলে হয়তাে পুরাে প্রজাতিটাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর যদি কোনাে প্রজাতির জীবদের মধ্যে বৈচিত্র্য বেশি থাকে, তাহলে নতুন কোনাে পরিবেশে খাপ খাওয়ানাের মতাে বৈশিষ্ট্য কারাে না কারাে মধ্যে থাকার সন্ধানও হবে। বেশি। তখন যদি বড় কোনাে বিপদও আসে, তবু তার অন্তত কিছু সদস্য বেঁচে যাবে। তাই মিয়ােসিস কোনাে জীবের জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। জীবের টিকে থাকার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেয় বলেই মিয়ােসিস বিভাজন বিবর্তিত হয়ে জীবজগতে নিজের স্থান করে নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.
close