Header Ads

সালােকসংশ্লেষণ কী সালােকসংশ্লেষণ এর বিস্তারিত (Photosynthesis)

সবুজ উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলাে যে এরা সূর্যালােকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড (co) এবং পানি থেকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে। সবুজ উদ্ভিদে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য তৈরি হওয়ার এ প্রক্রিয়াকে সালােকসংশ্লেষণ (Photosynthesis) বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় আলােকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সবুজ উদ্ভিদে প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদ নিজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়ােজনীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে ব্যবহার করে এবং অবশিষ্ট খাদ্য ফল, মূল, কাণ্ড অথবা পাতায় সঞ্চিত রাখে। উদ্ভিদে সঞ্চিত এই খাদ্যের উপরেই মানবজাতি ও অন্যান্য জীবজন্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে।
সালােকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়ােজনীয় উপকরণগুলাে হলাে: ক্লোরােফিল, আলাে, পানি এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড। সালােকসংশ্লেষণ একটি জৈব রাসায়নিক (biochemical) বিক্রিয়া, যেটি এরকমঃ 

সালােকসংশ্লেষণ কী

পাতার মেসােফিল টিস্যু সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার প্রধান স্থান। স্থলজ সবুজ উদ্ভিদ মাটি থেকে মূলের মাধ্যমে পানি শােষণ করে পাতার মেসােফিল টিস্যুর ক্লোরােপ্লাস্টে পৌঁছায় এবং স্টোমা বা পত্ররন্ত্রের মাধ্যমে বায়ু থেকে co, গ্রহণ করে, যা মেসােফিল টিস্যুর ক্লোরােপ্লাস্টে পৌঁছে। জলজ উদ্ভিদ পানিতে

সালােকসংশ্লেষণ

দ্রবীভূত co, গ্রহণ করে। বায়ুমণ্ডলে 0.03% এবং পানিতে 0.3% co, আছে, তাই জলজ উদ্ভিদে সালােকসংশ্লেষণের হার স্থলজ উদ্ভিদ থেকে বেশি। অক্সিজেন এবং পানি সালােকসংশ্লেষণের উপজাত দ্রব্য (by-product)। এটি একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া (oxidation-reduction process)। এ প্রক্রিয়ায় Ho জারিত হয় এবং co, বিজারিত হয়। 4.2.1 সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সালােকসংশ্লেষণ একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। 1905 সালে ইংরেজ শারীরতত্ত্ববিদ ব্ল্যাকম্যান (Blackman) এ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন। পর্যায় দুটি হলাে, আলােকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) এবং আলােক নিরপেক্ষ পর্যায় (Light independent phase)।

 

সালােকসংশ্লেষণ কী সালােকসংশ্লেষণ এর বিস্তারিত (Photosynthesis)
(a) আলােকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) আলােকনির্ভর পর্যায়ের জন্য আলাে অপরিহার্য। এ পর্যায়ে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় ATP (অ্যাডিনােসিন ট্রাইফসফেট), NADPH (বিজরিত নিকোটিনামাইড অ্যাডনিন ডাইনিউক্লিওটাইড ফসফেট) এবং H' (হাইড্রোজেন আয়ন বা প্রােটন) উৎপন্ন হয়। এই রূপান্তরিত শক্তি ATP-এর মধ্যে সঞ্চিত হয়। এই বিক্রিয়ায় ক্লোরােফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্লোরােফিল অণু আলােকরশ্মির ফোটন (photon) শােষণ করে এবং শশাষণকৃত ফোটন থেকে শক্তি সঞ্চয় করে ADP (অ্যাডিনােসিন ডাইফসফেট) অজৈব ফসফেট (Pi = inorganic phosphate)-এর সাথে মিলিত হয়ে ATP তৈরি করে। ATP তৈরির এই প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন (photophosphorylation) বলে।

সূর্যালােক এবং ক্লোরােফিলের সাহায্যে পানি বিয়ােজিত হয়ে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়াকে পানির ফটোলাইসিস (photolysis) বলা হয়। 

আলােক নিরপেক্ষ পর্যায় বা অন্ধকার পর্যায় (Light independent phase বা dark phase) 

আলােক নিরপেক্ষ পর্যায়ে আলাের প্রত্যক্ষ প্রয়ােজন পড়ে না, তবে আলাের উপস্থিতিতেও এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। বায়ুমণ্ডলের co, পত্ররন্দ্রের মধ্য দিয়ে কোষে প্রবেশ করে। আলােক পর্যায়ে তৈরি ATP, NADPH এবং H+ এর সাহায্যে আলােক নিরপেক্ষ পর্যায়ে Co, বিজরিত হয়ে কার্বোহাইড্রেটে পরিণত হয়। সবুজ উদ্ভিদে Co, বিজারণের তিনটি গতিপথ শনাক্ত করা হয়েছে যেগুলাে হচ্ছে ক্যালভিন চক্র, হ্যাচ ও ব্ল্যাক চক্র এবং ক্রেসুলেসিয়ান এসিড বিপাক। এদের মধ্যে প্রথম দুটির সংক্ষিপ্ত আলােচনা নিচে দেওয়া হলাে।

আলােক নিরপেক্ষ পর্যায় বা অন্ধকার পর্যায় (Light independent phase বা dark phase)

ক্যালভিন চক্র বা c3 গতিপথ (Calvin cycle বা c cycle): co2

আত্তীকরণের এ গতিপথকে আবিষ্কারকদের নামানুসারে ক্যালভিন বেনসন ও ব্যাশাম চক্র বা সংক্ষেপে ক্যালভিন চক্র বলা হয়। ক্যালভিন তার এ আবিষ্কারের জন্য 1961 সালে নােবেল পুরস্কার পান। অধিকাংশ উদ্ভিদে এই প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরি হয় এবং প্রথম স্থায়ী পদার্থ 3-কার্বনবিশিষ্ট ফসফোগ্লিসারিক এসিড বলে এই ধরনের উদ্ভিদকে বলে C3 উদ্ভিদ।

হ্যাচ ও স্যাক চক্র বা c4 গতিপথ (Hatch and slack cycle বা cd cycle):

অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী M.D. Hatch ও C.R. slack (1966 সালে) co2 বিজারণের আর একটি গতিপথ আবিষ্কার করেন। এই গতিপথের প্রথম স্থায়ী পদার্থ হলাে ও-কার্বনবিশিষ্ট অক্সালাে এসিটিক এসিড তাই, একে | c গতিপথ বলে।
| C, উদ্ভিদে একই সাথে হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র এবং ক্যালভিন চক্র পরিচালিত হতে দেখা যায়। c. উদ্ভিদের তুলনায় C4 উদ্ভিদে সালােকসংশ্লেষণের হার বেশি এবং উৎপাদন ক্ষমতাও বেশি। সাধারণত ভুট্টা, আখ, অন্যান্য ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ, মুথা ঘাস, অ্যামারন্যথাস (Amaranthus) ইত্যাদি উদ্ভিদে Cপরিচালিত হয়।

সালােকসংশ্লেষণে ক্লোরােফিলের ভূমিকা

পাতার ক্লোরােফিলের পরিমাণের সাথে সালােকসংশ্লেষণের হারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, কারণ একমাত্র ক্লোরােফিলই আলােকশক্তি গ্রহণ করতে পারে। পুরাতন ক্লোরােপ্লাস্ট নষ্ট হয়ে যায় এবং তখন নতুন ক্লোরােপ্লাস্ট সংশ্লেষিত হয়। নতুন ক্লোরােপ্লাস্ট এবং ক্লোরােপ্লস্টের উপাদান সৃষ্টির হারের উপর সালােকসংশ্লেষণের হার নিভরশীল। সালােকসংশ্লেষণ ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য ক্লোরােপ্লাস্টের বিভিন্ন উপাদান দ্রুত এবং প্রচুর পরিমাণে পুনর্গঠিত হওয়া প্রয়ােজন। তবে কোষে খুব বেশি পরিমাণ ক্লোরােফিল থাকলে এনজাইমের অভাব দেখা দেয় এবং সালােকসংশ্লেষণ কমে যায়।

সালােকসংশ্লেষণে আলাের ভূমিকা 

সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলাের গুরুত্ব অপরিসীম। পানি এবং co, থেকে শর্করা তৈরির জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তির উৎস আলাে। সূর্যালােক ক্লোরােফিল সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে। সূর্যালােকের প্রভাবেই পত্ররন্দ্র উন্মুক্ত হয়, co, পাতার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে এবং খাদ্য প্রস্তুতকরণে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু পাতায় যেটুকু আলাে পড়ে, তার অতি সামান্য অংশই সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। আবার আলােকবর্ণালির লাল, নীল, কমলা এবং বেগুনি অংশটুকুতেই সালােকসংশ্লেষণ ভালাে হয়। সবুজ কিংবা হলুদ আলােতে সালােকসংশ্লেষণ ভালাে হয় না। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আলাের পরিমাণ বাড়লে সালােকসংশ্লেষণের হারও বেড়ে যায়। কিন্তু আলাের পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গেলে পাতার ভিতরকার এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়, ক্লোরােফিল উৎপাদন কম হয়। ফলে সালােকসংশ্লেষণের হারও কমে যায়। সাধারণত 400 nm থেকে 480 nm এবং 680 nm (ন্যানােমিটার) তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলােতে সালােকসংশ্লেষণ সবচেয়ে ভালাে হয়।

সালােকসংশ্লেষণের প্রভাবক 

আলাে এবং ক্লোরােফিল ছাড়াও সালােকসংশ্লেষণ আরও কতগুলাে প্রভাবক দিয়ে প্রভাবিত হয়। প্রভাবকগুলাে কিছু বাহ্যিক এবং কিছু অভ্যন্তরীণ। প্রভাবকের উপস্থিতি, অনুপস্থিতি, পরিমাণের কমবেশি সলােকসংশ্লেষণের পরিমাণও কম-বেশি করে থাকে। প্রভাবকগুলাে হচ্ছে:

বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ

আলাে: 

এ সম্পর্কে ইতিমধ্যে আলােচনা করা হয়েছে।

কার্বন ডাই-অক্সাইড

কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়া সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। এ প্রক্রিয়ায় যে খাদ্য প্রস্তুত হয় তা কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজারণের ফলেই হয়ে থাকে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ 0.03 ভাগ, কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ শতকরা এক ভাগ পর্যন্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করতে পারে। তাই বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সালােকসংশ্লেষণের পরিমাণও বেড়ে যায়। তবে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ খুব বেশি মাত্রায় বেড়ে গেলে পাতার মেসােফিল টিস্যুর কোষের অম্লত্বও বেড়ে যায় এবং পত্ররন্দ্র বন্ধ হয়ে সালােকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।

তাপমাত্রা: 

সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা বিশেষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত অতি নিম্ন তাপমাত্রা (0° সেলসিয়াস, এর কাছাকাছি) এবং অতি উচ্চ তাপমাত্রায় (45° সেলসিয়াসের উপরে) এ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য পরিমিত (optimum) তাপমাত্রা হলাে 220 সেলসিয়াস থেকে 35° সেলসিয়াস পর্যন্ত। তাপমাত্রা 220 সেলসিয়াসের কম বা 359 সেলসিয়াসের বেশি হলে সালােকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।

পানি: 

সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরির উদ্দেশ্যে co, কে বিজারণের জন্য প্রয়ােজনীয় H+ (হাইড্রোজেন আয়ন) পানি থেকেই আসে। পানির ঘাটতি হলে পত্ররন্ধের রক্ষীকোষেও স্ফীতি হারিয়ে রন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাতাস থেকে Co, অনুপ্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত পানি ঘাটতির ফলে এনজাইমের সক্রিয়তা বিনষ্ট হয়ে সালােকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্থ হতে পারে।

অক্সিজেন: 

বাতাসে অক্সিজেনের ঘনত্ব বেড়ে গেলে সালােকসংশ্লেষণের হার কমে যায় আর অক্সিজেনের ঘনত্ব কমে গেলে সালােকসংশ্লেষণের হার বেড়ে যায়। তবে অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে সালােকসংশ্লেষণ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।

খনিজ পদার্থ: 

ক্লোরােফিলের প্রধান উপকরণ হচ্ছে নাইট্রোজেন এবং ম্যাগনেসিয়াম। লােহার অনুপস্থিতিতে পাতা ক্লোরােফিল সংশ্লেষণ করতে পারে না, ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। কাজেই মাটিতে এসব খনিজের অভাব হলে সালােকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।

রাসায়নিক পদার্থ: 

বাতাসে ক্লোরােফরম, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন বা কোনাে বিষাক্ত গ্যাস থাকলে সালােকসংশ্লেষণে ব্যাঘাত ঘটে বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ 

ক্লোরােফিল: 

এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলােচনা করা হয়েছে। 

পাতার বয়স ও সংখ্যা 

একেবারে কচি পাতা এবং একেবারে বয়স্ক পাতায় ক্লোরােফিলের পরিমাণ কম থাকে বলে সালােকসংশ্লেষণ কম হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্লোরােপ্লাস্টের সংখ্যাও বেশি হয়। মধ্যবয়সী পাতায় সবচেয়ে বেশি সালােকসংশ্লেষণ ঘটে। পাতার সংখ্যা বেশি হলে সালােকসংশ্লেষণ বেশি হয়।

শর্করার পরিমাণ: 

সালােকসংশ্লেষণ চলাকালীন শর্করার পরিবহন কম হলে তা সেখানে জমা হয়ে থাকে। বিকেলে পাতায় বেশি শর্করা জমা হয় বলে সালোকসংশ্লেষণের গতি মন্থর হয়।

পটাশিয়াম:

পটাশিয়ামের অভাবে সালােকসংশ্লেষণের পরিমাণ বেশ কমে যেতে দেখা যায়। কারণ, সম্ভবত এ প্রক্রিয়ায় পটাশিয়াম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

এনজাইম: 

সালােকসংশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজাইমের প্রয়ােজন হয়। 

জীবজগতে সালােকসংশ্লেষণের গুরুত্ব

সালােকসংশ্লেষণ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সূর্যালােক এবং জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। নিচের সংক্ষিপ্ত আলােচনা থেকে সালােকসংশ্লেষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাবে। বিশ্বজুড়ে এ বিক্রিয়ার ব্যাপকতা লক্ষ করে কোনাে কোনাে বিজ্ঞানী এ প্রক্রিয়াকে জৈব রাসায়নিক কারখানা নামে অভিহিত করেছেন। সমস্ত শক্তির উৎস হলাে সূর্য। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারে। কোনাে প্রাণীই তার নিজের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না। আমরা খাদ্য হিসেবে ভাত, রুটি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি যা-ই গ্রহণ করি না কেন, তার সবই প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি। কাজেই খাদ্যের জন্য সমগ্র প্রাণিকুল সবুজ উদ্ভিদের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, আর সবুজ উদ্ভিদ এ খাদ্য প্রস্তুত করে সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। কাজেই বলা যায়, পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণীর খাদ্য প্রস্তুত হয় সালােকসংশ্লেষণের মাধ্যমে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, বিশেষ করে ০, ও CO-এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বায়ুতে অক্সিজেন গ্যাসের পরিমাণ 20.95 ভাগ এবং co, গ্যাসের পরিমাণ 0.033 ভাগ। পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং জীবনযাপনের জন্য বায়ুতে এ দুটি গ্যাসের পরিমাণ স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকতে হয়। এ পরিমাণের তারতম্য ঘটলে বায়ুমণ্ডল জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। আমরা জানি, সব জীবেই (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সব সময়ের জন্য শ্বসনক্রিয়া চলতে থাকে। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীব ০, গ্রহণ করে এবং co, ত্যাগ করে। কেবল শ্বসন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বায়ুমণ্ডলে ০, গ্যাসের স্বল্পতা এবং co, গ্যাসের আধিক্য দেখা দিত। কিন্তু সবুজ উদ্ভিদ সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডল থেকে co, গ্রহণ করে এবং ০, ত্যাগ করে বলে এখনও বায়ুমণ্ডলে ০, ও co, গ্যাসের সঠিক অনুপাত রক্ষিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে অধিক হারে বন-জঙ্গল ধ্বংস করার ফলে বায়ুমণ্ডলে এ দুটি গ্যাসের অনুপাত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, কাজেই আমাদেরকে অবশ্যই অধিক হারে গাছ লাগাতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রগতি অনেকাংশে সালােকসংশ্লেষণের উপর প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে নির্ভরশীল। অন্ন, বস্ত্র, শিল্পসামগ্রী (যেমন নাইলন, রেয়ন, কাগজ, সেলুলােজ, কাঠ, রাবার), ঔষধ (যেমন কুইনাইন, মরফিন), জ্বালানি কয়লা, পেট্রল, গ্যাস প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। তাই সালােকসংশ্লেষণ না ঘটলে মানবসভ্যতা ধ্বংস হবে, বিলুপ্ত হবে জীবজগৎ। সুতরাং সালােকসংশ্লেষণ জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। শুধু তা-ই নয়, আজ থেকে প্রায় 5 বিলিয়ন বছর আগে যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয়, তখন এখানে কোনাে গ্যাসীয় অক্সিজেন ছিল না। পৃথিবীতে আদি উদ্ভিদ সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি করে এই পৃথিবীকে আমাদের জন্য বাসযােগ্য করে দিয়েছিল।


No comments

Powered by Blogger.
close